ভূমিকা
আধুনিক বিশ্বে যে বিষয়টি সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজন তা হলো ব্যবস্থাপনা । মানব সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে জীবনযাপনের জন্য যেসব কার্য সম্পাদন করত সে থেকেই ব্যবস্থাপনার প্রচলন হয়েছে । বর্তমানে ব্যবস্থাপনা একটি অত্যাবশ্যকীয় সামাজিক শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃত। আজকাল ছোট-বড় সকল কারবারি, অকারবারি সকল প্রতিষ্ঠানেই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিসরে যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অবশ্যই দক্ষ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য ।
ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা
ব্যবস্থাপনা একটি ব্যাপক অর্থবহ শব্দ । ব্যবস্থাপনার সুনির্দিষ্ট ও সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন । Management শব্দটি ইতালীয় শব্দ ‘Maneggiare' হতে উদ্ভুত । Maneggiare শব্দের অর্থ ‘To train up the horses' অর্থাৎ অশ্বকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষিত করে তোলা । তাই শাব্দিক অর্থে পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত (to handle) কাজকে ব্যবস্থাপনা বলে ।
অনেক ব্যবস্থাপনাবিদ মনে করেন Management শব্দটি ফরাসি Manage এবং Menager শব্দ হতে উৎপত্তি হয়েছে । Manage শব্দের অর্থ হলো (The act of guiding or leading) অর্থাৎ পরিবার পরিচালনা করা ।
সাধারণ অর্থে: প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের সুকৌশলে পরিচালনা করাকে ব্যবস্থাপনা বলে ।
ব্যাপক অর্থে: প্রতিষ্ঠানের মানবীয় ও বস্তুগত সম্পদসমূহের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, সমন্বয় সাধন, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যাবলির সমাহারকে ব্যবস্থাপনা বলে ।
নিম্নে প্রখ্যাত মনীষী ও ব্যবস্থাপনাবিদদের কতিপয় উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো:
১। এল. এ. এলেন ( L. A Allen ) -এর মতে, ‘একজন ব্যবস্থাপক যা করেন তাই ব্যবস্থাপনা । (Management is what a manager does)
২। এল.এ. এপলি (L.A Appley)-এর মতে, ‘ব্যবস্থাপনা হলো অন্যের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেওয়ার কৌশল ।' (Management is the art of getting things done through the efforts of other people)
৩। জর্জ. আর. টেরি (GR. Terry)-এর মতে, ব্যবস্থাপনা হচ্ছে পরিকল্পনা, সংগঠন, উৎসাহিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণের একটি প্রক্রিয়া যা মানুষ ও অন্যান্য সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্দেশ্য নির্ধারণ ও লক্ষ্য অর্জন করে ।
৪ । ই.এফ.এল ব্রিচ (E.F.L Breach) -এর মতে, ‘ব্যবস্থাপনা হচ্ছে দক্ষতার সাথে কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা ।
৫। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়ল (Henry Fayol)-এর মতে, ‘ব্যবস্থাপনা হলো পূর্বানুমান ও পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ করা ।’
৬। আমেরিকার ম্যানেজমেন্ট সমিতি (American Management Association)- এর মতে, ‘মানুষের উদ্যম সংগঠিত ও পরিচালিত করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক শক্তি ও সম্পদগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত করার বিজ্ঞান ও কলাকে ব্যবস্থাপনা বলে ।
ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি
Function of Management
ব্যবস্থাপনা বিশারদ চিন্তাধারা ও মতামতের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি কে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনাকরা হলো।
নিম্নে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা করা হলো:
১। পরিকল্পনা (Planning) : পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার প্রথম ও মৌলিক কাজ। পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের দিক-নির্দেশনা। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কী কাজ করা হবে, কে করবে, কখন করবে, কীভাবে করবে ইত্যাদি নির্ধারণ করাই হলো পরিকল্পনা ।
পরিকল্পনা সম্বন্ধে অধ্যাপক নিউম্যান বলে, 'ভবিষ্যতে কী করতে হবে তার অগ্রিম সিদ্ধান্তকেই পরিকল্পনা বলে । মোটকথা প্রতিষ্ঠানের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রণীত ভবিষ্যৎ নকশাকে পরিকল্পনা বলে ।
২। সংগঠন (Organization): পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপরিহার্য উপাদান হলো সংগঠন । পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংগৃহীত উপাদান ও জনশক্তির সুশৃঙ্খল বিন্যাসকে সংগঠন বলে । সংগঠন হচ্ছে একটি কাঠামো বিশেষ। যেখানে কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন করে দেওয়া হয় । এতে কর্মীরা সহজেই প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে ।
৩। কর্মীসংস্থান (Staffing): সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণের পর ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হলো বিভিন্ন স্তরে কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী যোগ্যতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী জোগাড় এবং তাদের যথাযথভাবে নিয়োগ দান করা। সুতরাং সাংগঠনিক কাঠামোতে মানব শক্তির অভাব পূরণের জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে কর্মীসংস্থান বলে ।
৪ । নির্দেশনা (Direction) : প্রাতিষ্ঠানিক গতিশীলতা ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কর্মীদেরকে যে আদেশ, নির্দেশ ও পরামর্শ প্রদান করা হয় তাকে নির্দেশনা বলে । নির্দেশনা প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি । তাই একে প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড বলা হয় ।
৫। প্রেষণা (Motivation) : প্রেষণা ব্যবস্থাপনার একটি মনস্তাত্ত্বিক দিক । যে প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থাপক শ্রমিক কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি আকৃষ্ট, আগ্রহী এবং উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে থাকেন, তাকে প্রেষণা বলা হয় । এর মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে কাজ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়। মাইকেল জুসিয়াস-এর মতে, 'প্রেষণা হলো ব্যবস্থাপনা কর্তৃক সেই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ যা কর্মীদেরকে নির্ধারিত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উৎসাহিত ও প্রণোদিত করে।'
৬। সমন্বয় সাধন (Co-ordination) : প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভাগ, উপকরণ ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রক্রিয়াই হলো সমন্বয় সাধন । সমন্বয় সাধন দলগত সমঝোতার একটি মাধ্যম। সমন্বয় সাধনের ফলে সংগঠনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে অসামঞ্জস্য দূর হয় এবং সকলে একযোগে ও স্বাচ্ছন্দ্যে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনে সচেষ্ট হয় ।
৭। নিয়ন্ত্রণ (Controlling): নিয়ন্ত্রণ হলো ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে যথাস্থানে সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হলো নিয়ন্ত্রণ । হেনরি ফেয়ল-এর মতে, 'নিয়ন্ত্রণ হলো গৃহীত পরিকল্পনা, জারিকৃত নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুযায়ী কার্য পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা (Production Management )
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা হচ্ছে উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এ শব্দ দুটো নিয়ে গঠিত একটি যুগ্ম শব্দ। উৎপাদন অর্থ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাঁচামালকে পরিণত পণ্যে রূপান্তরিত করা। পক্ষান্তরে সর্বাধিক দক্ষতার সাথে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের অপরাপর লোকের মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে নেওয়ার কলা ও বিজ্ঞানই হলো ব্যবস্থাপনা।
সাধারণ অর্থে উৎপাদন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনাকে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বলা হয় ।
ব্যাপক অর্থে কাঁচামালকে পরিণত পণ্যে রূপান্তরিত করার সমুদয় প্রক্রিয়ায় প্রয়োগকৃত পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ সংবলিত সামগ্রিক কার্যক্রম হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা।
বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা (Marketing Management): ব্যবসায় সাফল্য অর্জনে উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম। উৎপাদিত পণ্যেও বাজারজাতকরণের উপরই ব্যবসার সাফল্য অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব অনেকটা নির্ভরশীল। আধুনিক বাজারজাতকরণ একটি অত্যন্ত গতিশীল ক্ষেত্র।
সাধারণ অর্থে বাজারজাতকরণের সামগ্রিক কার্যক্রমে ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ সম্পর্কিত ধারণাই বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা ।
ব্যাপক অর্থে উৎপাদিত পণ্য বা সেবা ভোক্তার কাছে সন্তোষজনকভাবে এবং সময়মতো পৌঁছে দেওয়ার কলাকৌশলকেই বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা বলে ।
কর্মী ব্যবস্থাপনা (Personal Management )
কর্মী ব্যবস্থাপনা হলো সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মুখ্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শ্রমিক কর্মী ব্যবস্থাপনানর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সে অংশ যা শ্রমিক কর্মীসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
কর্মী ব্যবস্থাপনা বলতে এমন একটি কৌশলকে বোঝায় যা দিয়ে একটি দক্ষ জনশক্তি সংগ্রহ উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় যাতে উক্ত সংগঠনের বিভিন্ন কার্যাবলির মধ্যে মিতব্যয়িতা ও অধিক কর্ম তৎপরতা সৃষ্টি হয়। কর্মী ব্যবস্থাপনার প্রধান কার্যাবলী সমূহ হচ্ছে
১। কর্মী পরিকল্পনা ২। কর্মী সংস্থা ৩। কর্মী নির্বাচন ৪ কর্মী সংগঠন
কর্মী পরিকল্পনা (Planning of Employ): একটি ব্যবসার উদ্দেশ্য সফল করার জন্য কত সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন তা নির্বাচন, নিয়োগ, উন্নয়ন পারিশ্রমিক প্রভৃতি পূর্বনির্ধারিত প্রক্রিয়াকেই কর্মী পরিকল্পনা বলে। ব্যবসার ধরণ, প্রকৃতি ও আয়তনের উপর কর্মী সংখ্যা নির্ভর করে। যেমন একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে অধিক সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়। অপরদিকে উৎপাদন প্রক্রিয়া যন্ত্রপাতি চালিত হলে সেখানে কম সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয় । কর্মীর পারিশ্রমিক কীভাবে দেওয়া হবে। অর্থাৎ মাসিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক পারিশ্রমিক দেওয়া হবে তা আগেই নির্ধারণ করা হয়, যা কর্মী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কর্মী সংগ্রহ (Source of Employ): ব্যবসায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী সংগ্রহ করা কর্মী ব্যবস্থাপনার পরবর্তী কাজ । প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী কোথা থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং কীভাবে সংগ্রহ করা হবে তা নির্ধারণপূর্বক কর্মী সংগ্রহ করা হয়। কর্মী সংগ্রহের পূর্বে কোন পদে কতজন লোক নেওয়া হবে তা চিহ্নিত করতে হবে এবং উক্ত পদের জন্য কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে তাও নির্ধারণ করতে হবে। চিহ্নিত করার পরই কর্মী সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে ।
কর্মী নির্বাচনের সংজ্ঞা (Definition of Selection of Employees)
সাধারণ অর্থে: কর্মী নির্বাচন বলতে শুধু নতুন কর্মী নিয়োগ করাকে বোঝায় না; কর্মীদের পদোন্নতি, পদাবনতি, বহিষ্কার বা ছাঁটাই প্রক্রিয়াও কর্মী নির্বাচনের অন্তর্ভুক্ত ।
কর্মী নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পদ্ধতিতে কর্মী নির্বাচন করে থাকে।
তবে বৃহদায়তন ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান কর্মী নির্বাচনের ব্যাপারে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১। বিভাগীয় রিকুইজিশন প্রাপ্তি: কর্মী নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরুতে কোথায়, কতজন ও কী ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর প্রয়োজন তা শ্রমিক কর্মী বিভাগকে জানাতে হয়। বিভিন্ন বিভাগ হতে রিকুইজিশন পাওয়ার পর কর্মী নির্বাচনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে ।
২। বিজ্ঞপ্তি প্রদান: শ্রমিক কর্মী ব্যবস্থাপনা বিভাগ শূন্য পদ পূরণের জন্য দৈনিক সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়ে থাকে। দরখাস্তে প্রার্থীর পূর্ণনাম, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বয়স, জাতীয়তা, বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদিসহ দরখাস্ত গ্রহণের শেষ তারিখ উল্লেখ থাকে ।
৩। আবেদনপত্র গ্রহণ ও বাছাই: বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা আবেদনপত্র জমা দেয়। আবেদনপত্র পাওয়ার পর তাতে ভুল আছে কিনা পরীক্ষা করে উপযুক্ত আবেদনপত্র বাছাই করে প্রার্থীর লিখিত বা সাক্ষাৎকার পরীক্ষার জন্য ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হয় ।
৪ । নিযুক্তি পরীক্ষা গ্রহণ: কর্মীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য এ পর্যায়ে নিম্নোক্ত পরীক্ষাসমূহ নেওয়া যেতে পারে
(ক) লিখিত পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় অনেকগুলো অভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সাধারণ জ্ঞান যাচাই করা হয় । তাছাড়া প্রার্থীর হাতের লেখা এবং লিখন ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায় ।
(খ) মৌখিক পরীক্ষা: নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের পর যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য নির্বাচন বোর্ডে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান করা হয়। এতে প্রার্থীর শারীরিক যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, আচার-আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, প্রবণতা ইত্যাদি অবস্থা জানা যায় ।
৫। প্রাথমিক ও সাময়িকভাবে নির্বাচন: উপরোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে কোন প্রার্থী যোগ্য বলে বিবেচিত হলে তাকে প্রাথমিক ও সাময়িকভাবে নির্বাচন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এরূপ নির্বাচনের সংবাদ প্রার্থীকে জানানো হয় না ।
৬। স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে প্রার্থীর দেহের ওজন, উচ্চতা, দৃষ্টিশক্তি, কর্মক্ষমতা ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয় ।
৭। প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইতিহাস অনুসন্ধান: চূড়ান্ত নিয়োগদানের পূর্বে প্রার্থীর অতীত কার্যাবলি যেমন-চরিত্র, আচার-আচরণ, কর্মক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয় । প্রাপ্ত তথ্য অনুকূলে হলে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়, অন্যথায় তালিকা হতে তার নাম বাদ দেওয়া হয় ।
৮। নিয়োগপত্র প্রদান: প্রার্থী সকল পরীক্ষায় যোগ্য বিবেচিত হলে তাকে সাধারণত অস্থায়ীভাবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং তার ঠিকানায় নিয়োগপত্র প্রেরণ করা হয়। এতে চাকরিসংক্রান্ত শর্তাবলি ও কাজে যোগদানের সর্বশেষ তারিখের উল্লেখ থাকে ।
৯। যোগদানের রিপোর্ট গ্রহণ: নিয়োগপত্রের আলোকে প্রার্থী নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যোগদানের রিপোর্ট পেশ করেন । রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করলে কর্মী নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে ।
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সরকারি, আধাসরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই উপরোক্ত পদ্ধতিতে কর্মী নির্বাচন করা হয়।
ব্যবসায় উন্নতিকল্পে কর্মীদের উন্নয়নের প্রয়োজন অপরিহার্য । কর্মীদের তাদের নির্ধারিত কাজে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন । প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং তাতে ব্যবসায় মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে সফলতা অর্জনের জন্য অবশ্যই দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। আর কর্মীদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই বৃদ্ধি করা যায়। শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে।
মানব জীবনে যোগাযোগ একটি অপরিহার্য উপাদান । মানুষ নিজের প্রয়োজনে পরস্পরের মধ্যে ভাব বা তথ্য বিনিময় করে । ভাব বা তথ্যেও এ বিনিময় কার্যকেই যোগাযোগ বলে। দোলনা থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তার প্রতিটি মুহূর্তে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। যোগাযোগ শুধু ব্যক্তিজীবনেই নয়, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর কার্যক্রম বিস্তৃত । বর্তমান যুগে যোগাযোগ ব্যতীত কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অচল ।
যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমসমূহ (Media of Communication)
মৌখিক যোগাযোগের মাধ্যম বা কৌশলসমূহ: মানবজীবনের যোগাযোগ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মৌখিক যোগাযোগই সর্বপ্রথম প্রচলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। নিম্নে মৌখিক যোগাযোগের বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম বা কৌশলসমূহ আলোচনা করা হলো:
১। কথোপকথন: কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া যোগাযোগকারী পক্ষসমূহের মধ্যে যে আলাপ- আলোচনা হয় তাকে কথোপকথন বলে। কথোপকথন মৌখিক যোগাযোগে ব্যবহৃত সর্বাধিক প্রচলিত মাধ্যম । এ পদ্ধতিতে বার্তা প্রেরক ও বার্তা প্রাপক উভয়েই খোলাখুলিভাবে মতবিনিময় করতে পারে ।
২। সাক্ষাৎকার: বার্তা প্রেরক ও প্রাপক নির্দিষ্ট সময়ে একত্রে মিলিত হয়ে পূর্বনির্ধারিত বিষয়ের উপর আলাপ-আলোচনা করলে তাকে সাক্ষাৎকার বলে। এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎপ্রার্থী নির্দিষ্ট দিনে ও সময়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে তথ্যাদি আদান-প্রদান করে থাকে ।
৩। টেলিফোন: মৌখিক যোগাযোগের একটি আধুনিকতম পদ্ধতি হলো টেলিফোন। ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত না হয়েও টেলিফোনের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে অবস্থিত ব্যক্তির সাথে অল্প সময়ে তথ্য বা সংবাদ আদান-প্রদান করতে পারেন ।
৪। মঞ্চ বক্তৃতাঃ যে পদ্ধতিতে একযোগে বহুসংখ্যক জনতার উদ্দেশে মঞ্চে দাঁড়িয়ে যোগাযোগকারী বক্তব্য পেশ করে তাকে মঞ্চ বক্তৃতা বলে। তবে এরূপ যোগাযোগে পারস্পরিক মত বিনিময়ের ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ থাকে না ।
৫। দলগত আলোচনা: মৌখিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে দলগত আলোচনা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে একটি দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে দলগত আলোচনা । কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে দলগত আলোচনার সুফল পাওয়া যায়। যেমন- প্রশিক্ষণ, মানব সম্পর্কে ধারণা যাচাই ।
৬। সম্মেলন বা কনফারেন্স: এটি মৌখিক যোগাযোগের একটি অন্যতম কৌশল। সাধারণ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো একটি দল আলাপ-আলোচনায় মিলিত হলে তাকে সম্মেলন বা কনফারেন্স বলে।
৭। টেলিভিশন ও বেতার: রেডিও-টেলিভিশনে কথিকা পাঠ করে যোগাযোগকারী তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পারে । এটি একটি একতরফা যোগাযোগ পদ্ধতি ।
৮। চা-চক্রঃ মৌখিক যোগাযোগের একটি আকর্ষণীয় পদ্ধতি হলো চা-চক্র। এ যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবস্থাপকগণ মাঝে মধ্যে চা-চক্রে মিলিত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে থাকেন ।
৯। আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্সঃ তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উপায়ে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্স পদ্ধতি বিশেষ ফলপ্রসূ ।
১০। কমিটি পর্যালোচনা: কমিটি পর্যালোচনা যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুবই ফলপ্রসূ মাধ্যম। এ মাধ্যমে কিছুসংখ্যক ব্যক্তি সামনাসামনি আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে ।
১১। অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ: এ ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক অধীনস্থ কর্মীদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কের খোঁজ-খবর পেতে পারে। এ ধরনের যোগাযোগ চায়ের টেবিলে, খেলার মাঠে স্থাপন করা সম্ভব ।
১২। পারিবারিক সমস্যা: পারিবারিক সন্ধ্যার ব্যবস্থা করলে ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীগণ ঘরোয়া পরিবেশে মিলিত হয়ে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন ।
১৩ । পুরস্কার বিতরণী সভা: এরূপ যোগাযোগ মাধ্যমে যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মীদের জন্য পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠান করে একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয় । এতে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয় ।
১৪। সামাজিক অনুষ্ঠান: বিয়ে, বনভোজন, বিতর্ক, বার্ষিক প্রীতিভোজ ইত্যাদি অনুষ্ঠান হলে নির্বাহী কর্মকর্তা ও অধস্তন কর্মীগণ মিলিত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। এতে উভয়ের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক মৌখিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে থাকে ।
লিখিত যোগাযোগের মাধ্যমসমূহ
লিখিত যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: যথা:
(ক) ব্যবস্থাপনার জন্য লিখিত যোগাযোগ ।
(খ) কর্মচারীদের জন্য লিখিত যোগাযোগ ।
(ক) ব্যবস্থাপনার জন্য লিখিত যোগাযোগ মাধ্যম বা কৌশলসমূহ: প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক, নির্বাহী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যোগাযোগের জন্য যে লিখিত যোগাযোগ পদ্ধতি ব্যবহার করেন তাকে ব্যবস্থাপনার জন্য লিখিত যোগাযোগ পদ্ধতি বলে । নিম্নে এরূপ যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আলোচনা করা হলো:
১। সংগঠন সম্পকির্ত যোগাযোগ: সংগঠন সম্পর্কিত যোগাযোগ যেমন- সাধারণ ঘোষণা, নীতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রশাসনিক নির্দেশনা ইত্যাদি যোগাযোগ লিখিত হওয়া একান্ত অপরিহার্য ।
২। জরুরি ব্যবস্থাপনা বুলেটিন: ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষ জরুরি বিবৃতি পরিবেশন এবং তা নির্ভুল ও অবিকৃত অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের কাছে পৌঁছাতে হলে লিখিত যোগাযোগ আবশ্যক ।
৩। আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা প্রতিবেদন: প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা, সংগঠন ও উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ব্যক্তি তার উপরস্থ কর্মকর্তার কাছে কার্য ধারায় যে লিখিত রিপোর্ট পেশ করে থাকেন তাকেই আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা প্রতিবেদন বলে ।
৪ । ব্যবস্থাপনা বিষয়ক চিঠি: সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ অথচ কম জরুরি বিষয়াদি চিঠির মাধ্যমে ব্যবস্থাপককে জানানোর পদ্ধতিকে ব্যবস্থাপনা সংবলিত চিঠি বলা হয়। এ ধরনের চিঠি সাধারণত সাপ্তাহিক খবরাখবর প্রকাশ করা হয় ।
৫। তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশিকা পুস্তক: প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মীদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশনা পুস্তক সরবরাহ করা হয় । এতে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আইন-কানুন, রীতি-নীতি, ট্রেড ইউনিয়নের কর্তব্য ও অধিকার ইত্যাদি লিখিত থাকে।
৬। তত্ত্বাবধায়কের জন্য বিশেষ প্রকাশনা: অনেক সময় বড় বড় কোম্পানি তত্ত্বাবধায়কের তত্ত্বাবধান কাজের সুবিধার জন্য বিশেষ প্রকাশনার ব্যবস্থা করে থাকে । এতে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়, হ্রাস, পণ্যের মানোন্নয়ন, দুর্ঘটনা হ্রাস, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি প্রভৃতি বিষয় লিপিবদ্ধ থাকে ।
(খ) কর্মচারীদের জন্য লিখিত যোগাযোগ মাধ্যমমূহ: প্রতিষ্ঠানের নিম্নস্তরে কর্মরত কর্মচারীদের কাছে লিখিত আকারে তথ্য প্রেরণ করার জন্য কতিপয় মাধ্যম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিম্নে কর্মচারীদের জন্য লিখিত যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আলোচনা করা হলো :
১। কর্মচারী বুলেটিন: অতি অল্প সময়ের মধ্যে কোনো জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ খবর কর্মচারীদের জানানোর জন্য লিখিতভাবে এ বুলেটিন প্রকাশ করা হয় ।
২। কর্মচারীদের সংবাদ: প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য, কর্মপদ্ধতি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে কর্মচারীদেরকে জানানোর জন্য প্রতি সপ্তাহে লিখিত সংবাদ প্রকাশ করা হয় ।
৩। মাসিক পত্রিকা প্রকাশ: অনেক সময় বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান এর কর্মচারীদেরকে সকল ব্যাপারে অবহিত করার জন্য নিজস্ব মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে থাকে ।
৪। নতুন কর্মচারীদের কাছে পত্র: নবনিযুক্ত কর্মীদেরকে অভিনন্দন ও তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য স্বাগত জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়।
৫। কর্মচারীদের বাড়িতে পত্র প্রেরণ: কর্মচারীদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ জানানোর জন্য ব্যবস্থাপক সাধারণত পাক্ষিক বা মাসিক তাদের বাড়ির ঠিকানায় পত্র প্রেরণ করে থাকে। তবে এতে কোনো প্রত্যুত্তর চাওয়া হয় না।
৬। বার্ষিক প্রতিবেদন: কর্মচারীদেরকে প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও ব্যর্থতা, বাৎসরিক আয়-ব্যয় ইত্যাদি বিষয়সমূহ জানানোর জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয় ।
৭। অভিযোগ বই: প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের অভিযোগ লিখিতভাবে জানানোর জন্য প্রত্যেক বিভাগে যে বই সংরক্ষণ করা হয় তাকে অভিযোগ বহি বলে। এতে কর্মচারীরা তাদের সুবিধা-অসুবিধা, অভাবে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে পারে ।
৮। নোটিশ বই: অধস্তন কর্মচারীদেরকে জরুরি ভিত্তিতে কোনো তথ্য অবগত করানোর জন্য নোটিশ বই ব্যবহার করা হয় ।
৯। রচনা প্রতিযোগিতা: কোম্পানির কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম অতিরিক্ত কৌশল হিসেবে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে । এর ফলে প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের আগ্রহ সৃষ্টি হয় ।
১০ । বেতন খাম: অনেক সময় কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, কর্তন, ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য ভাতা সম্পর্কিত তথ্য লিখিতভাবে বেতন খামের মাধ্যমে জানানো হয় ।
১১। পঠন তাক: প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে তাকের মধ্যে বইপত্র সাজিয়ে রাখা হয় । এ সমস্ত বইপত্র হতে কর্মচারীরা অবসর সময়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
১২। শ্রবণ দর্শন মাধ্যম: কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের লিখিত যোগাযোগ সহযোগী বা পরিপূরক হিসেবে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে ।
১৩। স্মারকপত্র: বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, ছুটি মঞ্জুর এবং চাকরি সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় কর্মচারীদের জানানোর জন্য কোম্পানি যে পত্র সরবরাহ করে থাকে তাকে স্মারক পত্র বলে ।
১৪। কার্যতালিকা: কর্মচারীদের কাজের বিশদ বিবরণ, তা সম্পাদনের সময় ও পদ্ধতি সম্পর্কে নির্বাহীবৃন্দের লিখিত তালিকাকে কার্যতালিকা বলে ।
আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগ প্রযুক্তিগত গতিধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিদ্যার অগ্রগতি ও উন্নয়নের মূলে রয়েছে উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
যোগাযোগ মানবজীবনের একটি সর্ব বিস্তৃত কার্যক্রম। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডই যোগাযোগনির্ভর । সুতরাং যোগাযোগের আওতা এতই ব্যাপক যে, তা নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে আলোচনা করা যায় না । মানুষের কর্মপরিধি যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত যোগাযোগের আওতাও ততদূর বিস্তৃত ।
যোগাযোগ প্রক্রিয়ার সাথে মানুষের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত । সামাজিক দল গঠনে যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত । তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।
নিম্নে ব্যবসায় সাফল্য লাভে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় আলোচনা করা হলোঃ
১. লক্ষ্য অর্জন: ফলপ্রসূ যোগাযোগ সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলকে মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়োগ করতে সমর্থ করে। যোগাযোগের উপস্থিতির কারণেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মী সার্বিক লক্ষ অর্জনের জন্য সচেষ্ট হয় ।
২. পরিকল্পনা প্রণয়ন: ব্যবসায়িক কার্যাবলি দক্ষতা ও নিপুণতার সাথে পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। পরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য নানারূপ তথ্য প্রয়োজন হয়। যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং পরিকল্পনা করা হয় ।
৩. পলিসি নির্ধারণ: কারবার সংগঠনের সার্বিক সফলতা নির্ভর করে পলিসি নির্ধারণের উপর। যোগাযোগ বিভিন্ন পক্ষের মতামত সংগ্রহের মাধ্যমে পলিসি প্রণয়নে সহায়তা করে ।
৪. পরিকল্পনা বাস্তবায়ন: পরিকল্পনা প্রণয়নের পর এর সার্বিক বাস্তবায়ন আবশ্যক। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যোগাযোগের উপর নির্ভর করতে হয়। যোগাযোগই প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে থাকে ।
৫. পরিকল্পনা ও নীতির ব্যাখ্যা: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা কর্মসূচিসমূহের প্রকৃত ব্যাখ্যার জন্য অনেক সময়ই নিচের স্তরের কর্মচারীদের উচ্চস্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়।
৬. সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি: কারবার প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা তথা গতিশীলতা বৃদ্ধিতে যোগাযোগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যেসব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগের তেমন বাস্তব প্রয়োগ নেই সেখানে লক্ষ্য অর্জন বিঘ্নিত হতে বাধ্য ।
৭. কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিঃ যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত করে বলে তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় । ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় ।
৮. সমস্যা সম্পর্কে অবগত করা: যোগাযোগের মাধ্যমে উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপক বা নির্বাহীগণ কারবার প্রতিষ্ঠানের অধস্তন কর্মীদের সমস্যা ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পারেন। এতে তারা সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন । ফলে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
৯. তথ্যের আদান-প্রদান: যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে প্রয়োজনীয় সংবাদ আদান-প্রদান করে থাকে । ফলে সবাই তাদের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয় ।
১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা: কারবারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ব্যবস্থাপকদের প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় । আর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য যা জোগান দেয় দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থা ।
১১. অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা: যোগাযোগ কারবার প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এরূপ পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ।
১২. সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি: যোগাযোগের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আন্তরিকতা ও পারস্পরিক সমঝোতা বৃদ্ধি পায় । ফলে একে অপরকে কার্য সম্পাদনে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসে ।
১৩. মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা: উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে । এতে শিল্প বিরোধের মতো অবাঞ্ছিত ঘটনাবলি হ্রাস পায়।
১৪. পণ্য প্রচার: নতুন উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে সম্ভাব্য ভোক্তাদের অবগত করানোর জন্য প্রচারকার্য সম্পাদনে ব্যবসায়ীকে যোগাযোগের উপর নির্ভর করতে হয় ।
১৫. কর্মীদের আগ্রহ সৃষ্টি: যোগাযোগের মাধ্যমে কারবারের বিভিন্ন দিক কর্মীদের অবহিত করে। ফলে কর্মীরা তাদের কার্য সম্পাদনে আগ্রহী হয় ।
১৬. নেতৃত্বের বিকাশ: যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে তার নেতৃত্বের প্রসার ঘটাতে পারে । যোগাযোগের উপর গুরুত্বারোপ করা না হলে নেতৃত্ব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য ।
১৭. বাজার গবেষণায় সহায়তা: বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক কারবারি জগতে টিকে থাকতে হলে কারবার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগী এবং ক্রেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হয় । সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু থাকলে ব্যবস্থাপক বাজার গবেষণার সাহায্যে এ সমস্ত বিচারে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় । এ সকল তথ্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে ।
১৮. বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক: ব্যবসায়-বাণিজ্যে আন্তর্জাতিকতা লাভের উদ্দেশে ব্যবসায়ীকে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয় ।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. আধুনিক ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক বা মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো কী কী?
২. পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায় ?
৩. কর্মী উন্নয়ন বলতে কী বোঝায় ?
৪. নির্দেশনাকে প্রতিষ্ঠানের হৃৎপিণ্ড বলা হয় কেন?
৫. বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে ?
৬. কীভাবে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়?
৭. যোগাযোগ কী?
৮. যোগযোগ প্রক্রিয়া কী?
৯. কর্মী ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দাও ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
২. উৎপাদন পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও ।
৩. উৎপাদন নিয়ন্ত্রক কাকে বলে?
৪. মজুত মাল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
৫. কর্মী সংগ্রের উৎস কয়টি ও কী কী উল্লেখ কর ।
৬. কর্মী নির্বাচনের সংজ্ঞা দাও ।
৭. যোগাযোগের সংজ্ঞা দাও ।
৮. যোগাযোগ প্রক্রিয়া কাকে বলে?
৯. যোগাযোগকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্নায়ুতন্ত্র বলা হয় কেন?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা কর ।
২. ব্যবস্থাপনার গৌণ কার্যাবলি আলোচনা কর ।
৩. আধুনিক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর ।
৪. কর্মী সংগ্রহের উৎসগুলো আলোচনা কর ।
৫. কর্মী নির্বাচনের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিগুলো আলোচনা কর ।
৬. কর্মী উন্নয়ন বা প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলো আলোচনা কর ।
৭. যোগাযোগের আওতা বা পরিধি আলোচনা কর ।
৮. ব্যবসায় যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।